শার্ল বোদলেয়ার
অনুবাদ: ইমরান ফিরদাউস
আমি বলতে চাইছি ঐসব আর্টিস্টদের কথা যারা দর্শকদের তাক লাগাতে পছন্দ করেন। তাক লাগানোর বাসনা ও চমকে যাবার ক্ষমতা উভয়ই নিয়মসম্মত। তবে ‘বিস্মিত হওয়ার’ সুখ যেমন আছে তেমনি ‘স্বপ্নকাতরতাও সুখের’। তুমি যদি আমা হতে শিল্পী অথবা শিল্পরসিকের তকমা পাবার জন্য গোঁ ধরে থাকো, তবে আমার প্রশ্ন হলো: কি উপায়ে নিজের কোনো সৃষ্টিতে বিস্ময়ের উত্তাপ ছড়িয়ে দিতে চাও বা কি দ্বারা বিস্মিত অনুভব কর? সুন্দর মাত্রেই বিস্মিত করে, তাই বলে বিস্মিত করার উপাদান থাকলেই সেটা সুন্দর হয়ে যাবে না। এখন, ফরাসী জনগণের দিকে চোখ ফেরালে দেখা যাবে, তাদের সংকীর্ণ হৃদয় স্বপ্ন দেখা বা মুগ্ধতার আনন্দ ধারনে একান্তই অক্ষম। সকলে বরং চায় পিলে চমকানো শিহরণ, হোক তা শিল্পের সাথে সাযুজ্যহীন কোনো উপায়। আর তাদের বাধ্যগত শিল্পীগণ, জন-রুচির কাছে নতজানু হয়ে থাকেন; তাদের লক্ষ্য বরাবরই দৃষ্টি আকর্ষণ করা, চমকে দেয়া এবং কুৎসিত কৌশলে বেকুব বানানো, কারণ, তারা পরিস্কার জানে পাবলিকের প্রকৃত শিল্প হতে পরমানন্দ উপভোগের ক্ষমতা নাই।
এই শোচনীয় কালে আরেকটি নতুন ইন্ডাস্ট্রির বিকাশ ঘটেছে যার দরুন পাবলিকের বেকুবি বিশ্বাস আরো পোক্ত হল। তাতে করে ফরাসি মনের যা কিছু নিবু নিবু দিব্য-আলো অবশিষ্ট ছিল এবার তাও নিবতে বসল। স্বাভাবিকভাবেই আকৃতি পূজার বাড়বাড়ন্ত এমন একটা আদর্শে আরাধনা করছিল যাতে নিজস্ব প্রকৃতিরও বিগ্রহ স্থাপন করা যায়। এই মুহুর্তে বিশেষ করে ফরাসি দেশে পেইন্টিংস ও খোদাইশিল্পের ক্ষেত্রে প্রচলিত শিল্প-বিশ্বাস হলো (এর বিপরীতে কারও কিছু বলার স্পর্ধা আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না) ‘আমি প্রকৃতির ভজনা করি এবং প্রকৃতির অকৃত্রিম পূজারি’ (এর কিছু ভালো কারণও আছে)। ‘আমি বিশ্বাস করি আর্ট শুধু মাত্র তাই যা প্রকৃতির অবিকল পুনরুৎপাদন করে মাত্র’ (একদল ভীরু সম্প্রদায়, স্বাভাবিক ভাবে অস্বস্তিকর বস্তু সমূহকে ছবি থেকে বাদ দিতে চান, যেমন, শয়নকক্ষে ব্যবহার্য মূত্রধানী অথবা মানব কংকাল)’। ‘যদি একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রক্রিয়া, প্রকৃতির অবিকল ছবি তুলতে পারে, তবে সেটিই হবে পরম শিল্প’ তো, এইসব কথা একদা এক প্রতিহিংসাপরায়ণ খোদার কানে পৌঁছুলে তিনি দাগুয়েখ নাম্নী চিত্রকর-রসায়নবিদ কে ইমাম মাহাদি করে তাদের উদ্দেশ্যে পাঠান। তখন তারা নিজদেরকে বলল, ‘যেহেতু ফটোগ্রাফি আমাদের নির্ভুলতার পরিপূর্ণ গ্যারান্টি দিচ্ছে (তারা তা সত্যিই বিশ্বাস করল, হায়রে পাগল! ) তাই আলোকচিত্রই হচ্ছে শিল্প’। আর ঐ মুহূর্তে থেকে আমাদের জঘন্য সমাজ নার্সিসাসের মতন ছুটে গেল ঐ মেটালিক প্লেটের প্রতি যা নিতান্ত মামুলি ছবি ধারণকরে। এক প্রকার বিকারগ্রস্থতা, অন্ধ উন্মত্ততা, এই নয়া সূর্য উপাসকদের অধিকার করে নেয়। একধরণের কদর্যতা তাদের মাঝে ফুটে উঠে। জনা কয়েক ইতর নারী-পুরুষ এক জায়গায় জড়ো করে ধোপা/কসাইয়ের সাজ-পোশাকে ফটো খিঁচে তারা ভাবছে আহা প্রাচীন সমাজের আনন্দ-বেদনার ছবি তুলে ফেললাম।